appeltv

জবেদ চাচার বিপদ

একজন উঁচু মানের পেটুক হিসাবে জবেদ চাচার সুনাম গ্রামজোড়া। লবন আর মরিচে ১ কেজি চালের ভাত সাবাড় করতে জবেদ চাচার সময় লাগে সাকুল্যে ১৫ মিনিট। শুনেছি বাজিতে তার স্কোর দেড় কেজি পর্যন্ত উঠে। 
জবেদ চাচার দেহের সাইজ খানিকটা দেওয়ানবাগী পীর সাহেবের মতো। (যারা দেওয়ানবাগী হুজুরকে দেখেনি তাদের কে টেপা মাছের সাইজ কল্পনা করার অনুরোধ করছি।)
জবেদ চাচা খেতে বসেন মস্ত একটা তামার পাত্রে। বয়সের ভারে খানিকটা নুয়ে পরলেও রাক্ষুসে রুচিটা তার মোটেও কমেনি। ভোজনের পর বিশাল দেহ নিয়ে ইদানিং উনি একা উঠে দাঁড়াতে পারেন না। দুই বাহুর নিচে শক্ত পোক্ত দুটো বাঁশ দিয়ে তাকে দাঁড় করিয়ে দিতে হয়। এই কাজে বরাবরই সহযোগিতা করে তার দুই ছেলে জলু এবং জহু। গত কয়েকবছর ধরে এভাবেই পিতৃ সেবা করে যাচ্ছে দুই ভাই।
একদিন এক বিয়ে বাড়ির ব্রেকফাস্টে বাজি ধরে ২৮ টা ডিম আর ৪০ টি রুটি খেয়ে জবেদ চাচা তার আগের রেকর্ড ব্রেক করলেন। বহু লোকের বাহবা পেয়ে জবেদ চাচা বুক টান করে গর্বের হাসি হাসতে গিয়ে পেটে একটা টান অনুভব করলেন। আজ পেটটা অস্বাভাবিক রকম ফুলে উঠেছে । তল পেটে প্রচন্ড খিঁচ নিয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে তিনি স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলেন। অস্বস্তি চরমে উঠলে চাচা গোপনে কয়েকবার বায়ু নির্গমনের চেষ্টা করে পরাস্ত হলেন। কিছুটা স্বস্তির আশায় মলত্যাগের অপেক্ষায় ছটপট করতে থাকলেন। কিন্তু বিধি বাম। প্রকৃতি মোটেও সাড়া দিচ্ছিল না। অগত্যা, প্রকৃতিকে ডাকতে টয়লেটে গেলেন জবেদ চাচা। বিশালাকার পেট নিয়ে তিনি কিছুতেই বসতে পারছিলেন না। ত্যাগের ব্রত নিয়ে হাঁটু ভাঙ্গা "দ" হয়ে কোনমতে বসলেন পায়খানায়। অনেক চেষ্টায় পায়ু পথে বিচ্ছিন্ন কয়েক টুকরো বায়ু নির্গমনে সফল হলেও আসল কাজের কোন লক্ষন বোঝা গেল না। জাবেদ চাচা কয়েকবার সজোরে কোঁথ দিলেন। প্রতিবারই নিউটন সাহেবের তৃতীয় সুত্রের প্রয়োগ ঘটল। বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় কয়েকবার বমি করে ফেললেন তিনি। এবার তিনি খানিকটা আরাম বোধ করলেন। বিপত্তি বাঁধলো কিছুক্ষণ পরেই। শৌচ কর্ম করতে গিয়ে স্ফিত পেটের দেয়ালে আটকা পরলেন তিনি। পশ্চাৎ দেশের সঠিক জায়গায় কোন মতেই তিনি হাত পৌছাতে পারলেন না। তবে দমে যাবার পাত্র তিনি নন। কৌশল পাল্টে জবেদ চাচা পেছন দিক থেকে কয়েকবার ট্রাই করলেন। কিন্তু তাতেও কোন ফল হলো না। সামন পেছন দিয়ে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টার পর জবেদ চাচা ক্লান্ত হয়ে ঘামতে শুরু করলেন। ভারী শরীর নিয়ে আলগা হয়ে বসে থাকতে তার বেজায় কষ্ট হচ্ছিল। নিরুপায় জবেদ চাচা অসহায়ভাবে ডাকলেন,
- সবিরন...সবিরন....
স্ত্রী সবিরন বেওয়া পাশেই ছিলেন। টয়লেট থেকে এভাবে অসভ্যের মতো বউকে ডাকাডাকি করায় সবিরন বেওয়া লজ্জা পেলেন।
- 'বে- আক্কেল মানুষ কোনহানকার। বাড়ি ভর্তি মানুষ, শরম নাই আপনের? পায়খানায় বইসা ডাকেন ক্যা?'
জবেদ চাচা কোঁথতে কোঁথতে বললেন- 'পাছাডা যে থাও (নাগাল) পাইতাছিনা গো!'
সবিরন বেওয়া ক্ষেদোক্তি করে উঠলেন- 'খাওনের সুম হুশ থাহে না? আমারে ডাহেন ক্যা?'
এহেন বিপদে স্ত্রীর ধমক খেয়ে জবেদ চাচার অসহায়ত্ব বাড়ল। ক্ষীণ কন্ঠে বললেন-
"আমার কি হাতই খাটা হইলো,নাকি পাছাডাই পাছায়া গেলো, বুজতাছি না তো"
পাঠক, আমার মোবাইলে ৭ দিন মেয়াদি ১ জিবি ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হবে কিছুক্ষণ পরেই। অবশিষ্ট প্রায় ২০০ ডাটা গচ্চা দিতে ইচ্ছে করছে না। ভিডম্যাট এ পুরোনো দিনের প্রিয় কিছু বাংলা গান ডাউনলোড দিতে গিয়ে গিয়ে আমিও জবেদ চাচা হয়ে গেলাম।
দ্যাশ নাকি ডিজিটাল হইছে। দ্যাশে নাকি অহন ৪ জি নেটওয়ার্ক চলতাছে। কিন্তু আমি টানা ৪৫ মিনিট ধইরা জানলার বাইরে হাত বাইর কইরা 2G নেটওয়ার্ক ধরার চেষ্টা করতাছি। অল্পক্ষণের মদ্দে ডাডার মেয়াদ শ্যষ হইবো। জবেদ চাচা তো কোঁথ দিয়া কিছুটা........ । কিন্তু আমার কোঁথে তো নেটওয়ার্ক আইতাছে না। আমার অবস্থা অহন জবেদ চাচার চাইতেও করুন। ভাবতাছি- "আমার কি হাতই খাটা হইলো নাকি নেটওয়ার্কই পাছায়া গেলো???"
লেখক:
মাঈদুল ইসলাম মুকুল।

No comments

Powered by Blogger.