বোধদয়
ঘুম থেকে উঠতে আজও অনেক দেরী হয়ে গেছে। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। তড়িঘড়ি করে ফ্রেস হয়ে এসে খাবার টেবিলে বসে শাফিন। আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি দেখে মেজাজ বিগড়ে যায় শাফিনের। চিৎকার করে সে মাকে ডাকতে থাকে। মা শুয়ে পরেছেন। আজ শরীরটা বেশ খারাপ তার। বুকের পুরনো ব্যাথাটা বেড়ে গেছে । চেঁচামেচি শুনে কাতরাতে কাতরাতে বিছানা ছেড়ে ছুটে আসেন তিনি।
- চিল্লাইতাছস ক্যান? কি হইছে?
শাফিন মায়ের দিকে কটমট করে তাকায়।
- এগুলা কি? এইগুলা দিয়া কি ভাত খাওয়া যায়?
- দুই দিন ধইরা ঘরে বাজার ঘাট কিছু নাই।
- বাজার ঘাট থাকে না ক্যান? আব্বার পেনশন ভাতার টেকা তো তুমি কম পাও না।
- বাজারডাও কি তর মরা বাপ কবর থাইকা আইসা কইরা দিয়া যাবো?
- কাউরে দিয়া বাজারডা করাইতে পার না তুমি?
- তুই তো আমার নিজের ছেলে, তরে দিয়াই তো পাই না।
- এইসব বাজার ফাজার করার টাইম নাই আমার। আমি অনেক ব্যাস্ত থাকি।
মা এবার রেগে যান।
- ঘুম ভাঙ্গে তর বেলা ১১ ডায়, ফিরস রাইত ১২ ডায়। খাইতে আহস কোন শরমে? হারামজাদা, কুলাঙ্গার.. কামাই করস কয়ডা। লেহা পড়া শ্যাষ কইরা মানুষ চাকরি করে। তুই কি করস? যা দিসি তাই খা, নাইলে উইঠা যা।
-'খা, তোর খাবার তুই খা।' বলেই শাফিন খাবার প্লেটটি ছুড়ে ফেলে দেয়। ক্রোধউন্মত্ব দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে
চেয়ারে লাথি মেরে হনহন করে বেরিয়ে যায়।
মা আর্তনাদ করে কাঁদতে থাকেন-
"তর মতো ছেলে আমি পেটে ধরছিলাম!
মায়ে সারা দিন কি করে,কি খায়, খবর রাহস তুই? মাওডা মরলে বুজবি...। তিন দিন ধইরা আমার পান - জর্দ্দা নাই। ওষুধ ফুরাইছে কত আগে। খোঁজ রাখস মায়ের? আমার কি আরো দুই চারডা পোলাপাইন আছে? তর কাছে কি আমি ট্যাহা পয়সা চাই? তর মতো কুলাঙ্গার সন্তানের জন্যে মাজারে মাজারে ঘুরছিলাম আমি !" এক নাগারে আহাজারি করতে থাকেন মা।
"তর মতো ছেলে আমি পেটে ধরছিলাম!
মায়ে সারা দিন কি করে,কি খায়, খবর রাহস তুই? মাওডা মরলে বুজবি...। তিন দিন ধইরা আমার পান - জর্দ্দা নাই। ওষুধ ফুরাইছে কত আগে। খোঁজ রাখস মায়ের? আমার কি আরো দুই চারডা পোলাপাইন আছে? তর কাছে কি আমি ট্যাহা পয়সা চাই? তর মতো কুলাঙ্গার সন্তানের জন্যে মাজারে মাজারে ঘুরছিলাম আমি !" এক নাগারে আহাজারি করতে থাকেন মা।
শাফিন পুকুর পারে এসে দাঁড়ায়। বাড়ির পোষা বিড়ালটার দিকে দৃষ্টি পরে তার। ছুঁড়ে ফেলে দেয়া ডিম ভাজিটা মুখে নিয়ে বসে আছে বিড়ালটি। মিঁউ মিঁউ করে কয়েকটা সংকেত দেয়। কোথা থেকে ছুটে আসে বিড়ালের বাচ্চা দুটো। বিড়ালটি মুখ থেকে ডিম ভাজিটা নামিয়ে বাচ্চাদের সামনে রাখে। উৎসব করে খেতে থাকে বাচ্চাদুটো। মা বিড়ালটি পরম তৃপ্তিতে চেয়ে চেয়ে বাচ্চাদুটোর খাওয়ার দৃশ্য উপভোগ করতে থাকে।
শাফিন দৃশ্যটির দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। একটি অবলা বিড়াল তার সন্তানদের পরম আদরে খাওয়াচ্ছে। অপর দিকে তার মা তারই আচরনে কষ্ট পেয়ে কাঁদছেন। অজান্তেই শাফিনের ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠে।
শাফিন দৃশ্যটির দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। একটি অবলা বিড়াল তার সন্তানদের পরম আদরে খাওয়াচ্ছে। অপর দিকে তার মা তারই আচরনে কষ্ট পেয়ে কাঁদছেন। অজান্তেই শাফিনের ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠে।
সে ভাবতে থাকে, পৃথিবীতে সে ছাড়া তো মায়ের আর কেই নেই। বাবা মারা যাবার পর মা সম্পুর্ণ একা হয়ে গেছে।
পান জর্দ্দা ফুরিয়ে যাবার কথা মা প্রায়ই বলে । শাফিন আমলে নেয় না। মায়ের এতো বেশি পান জর্দা খাওয়াটা তার একদম পছন্দ নয়। ক'দিন আগে মা বলেছিল, তার পায়ের সেন্ডেলটা নাকি ছিঁড়ে গেছে। শাফিন এবার মায়ের পায়ের দিকে তাকায়। দু'পায়ে দু'ধরণের ছেঁড়া স্যান্ডেল পরে আছে মা। পরনের শাড়িটার কিছু অংশ ছিঁড়ে গেছে। মাথার চুলগুলো উসকো খুসকো, জটা ধরা। তেল, স্যাম্পু পরেনি বহুদিন। ইদানিং মায়ের বুকের পুরনো ব্যাথাটা বেড়ে গেছে। বাবা মারা যাবার আগে একবার ডা.দেখিয়েছিলেন। আর কখনই ভালো ডাক্তার দেখানো হয়নি। সেই পুরনো প্রেসক্রিপশনের ওষুধ এখনও চলছে। একদিন ওষুধ না খেলে বুকের ব্যথাটা বাড়ে ।
পান জর্দ্দা ফুরিয়ে যাবার কথা মা প্রায়ই বলে । শাফিন আমলে নেয় না। মায়ের এতো বেশি পান জর্দা খাওয়াটা তার একদম পছন্দ নয়। ক'দিন আগে মা বলেছিল, তার পায়ের সেন্ডেলটা নাকি ছিঁড়ে গেছে। শাফিন এবার মায়ের পায়ের দিকে তাকায়। দু'পায়ে দু'ধরণের ছেঁড়া স্যান্ডেল পরে আছে মা। পরনের শাড়িটার কিছু অংশ ছিঁড়ে গেছে। মাথার চুলগুলো উসকো খুসকো, জটা ধরা। তেল, স্যাম্পু পরেনি বহুদিন। ইদানিং মায়ের বুকের পুরনো ব্যাথাটা বেড়ে গেছে। বাবা মারা যাবার আগে একবার ডা.দেখিয়েছিলেন। আর কখনই ভালো ডাক্তার দেখানো হয়নি। সেই পুরনো প্রেসক্রিপশনের ওষুধ এখনও চলছে। একদিন ওষুধ না খেলে বুকের ব্যথাটা বাড়ে ।
তিন দিন আগে মা তাকে ৫০০ টাকা দিয়েছে ওষুধ আনতে। কিন্তু টাকাটা খরচ করে ফেলেছে সে। শাফিন আর একবার বিড়ালটির দিকে তাকায়। বিড়ালটি তখন মুরগীর অনু:প্রবেশ ঠেকাতে ব্যাস্ত।
এই প্রথম শাফিন বুঝতে পারে, রাতে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত মা কেন বার বার ফোন করে তাকে বিরক্ত করে। গভীর রাত পর্যন্ত না খেয়ে মা কেন বসে থাকে। অসুস্থ্য শরীর নিয়েও মা কেন প্রতিদিন তার মশারি টানিয়ে যায়। সামান্য জ্বর হলেই মা কেন এতোটা ব্যাস্ত হয়ে উঠে।
শাফিন মায়ের দিকে তাকায়। পুরনো ময়লা কাপড়ে জরাজীর্ণ মাকে দেখতে এতো সুন্দর আগে কখনও লাগে নি তার। মায়ের ময়লা আঁচলে ভিজে যাওয়া চোখদুটো মুছে নিতে ইচ্ছে করে খুব।
শাফিন দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে- "আমাক মাফ কইরা দেও মা, তোমার প্রতি অনেক অবিচার করছি আমি। মা ছেলে দু'জনের চোখেই জল ছলছল করছে। মা বুঝতে পারে না তার উগ্র ছেলেটা হঠাৎ এমন সুবোধ বালক হয়ে উঠল কিভাবে। মা আঁচলে শাফিনের চোখ মুছে দিয়ে বলে- 'আয় খাইতে আয়।' শাফিন মাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
শাফিন মায়ের দিকে তাকায়। পুরনো ময়লা কাপড়ে জরাজীর্ণ মাকে দেখতে এতো সুন্দর আগে কখনও লাগে নি তার। মায়ের ময়লা আঁচলে ভিজে যাওয়া চোখদুটো মুছে নিতে ইচ্ছে করে খুব।
শাফিন দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে- "আমাক মাফ কইরা দেও মা, তোমার প্রতি অনেক অবিচার করছি আমি। মা ছেলে দু'জনের চোখেই জল ছলছল করছে। মা বুঝতে পারে না তার উগ্র ছেলেটা হঠাৎ এমন সুবোধ বালক হয়ে উঠল কিভাবে। মা আঁচলে শাফিনের চোখ মুছে দিয়ে বলে- 'আয় খাইতে আয়।' শাফিন মাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
No comments