appeltv

প্রচারযজ্ঞ

                                        
প্রচারযজ্ঞ
একটা গুরুত্বপূর্ণ ফোন কল রিসিভ করার জন্য বাইকটা থামালাম।
বিপরীত দিক থেকে আসা একটি রিক্সা থেকে মাইকিং এর তীব্র শব্দ কানে বিঁধল-
"মহিলা রোগীদের জন্য সুখবর। রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে আগত ডা. মোছা. অমুকা বেগম এম বি বি এস, বিসি এস, (স্বাস্থ্য) এম ডি, এফ সি পি এস ( পার্ট- ২) হ্যান ত্যান..... মহিলা রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন প্রতি শুক্রবারবার অমুক ক্নিনিকে নিয়মিত রোগী দেখেন, প্রয়োজনে অপারেশন করেন (অবশ্য্ রোগীর পকেট অপারেশনটা অতি মনযোগের সাথেই করানো হয়)। রোগী দেখার সময় সকাল ৯ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত..."
বিরক্ত হয়ে রিক্সা ওয়ালাকে মাইকটা বন্ধ করার জন্য ইশারা করলাম। কিন্তু ভদ্র লোক আমার অভদ্রতায় রুষ্ট হলেন। তিনি আমার কথা রাখলেন না। তিনি রাখলেন ডা. অমুকা বিবির কথা।
ফোনের অপর প্রান্তের ভদ্রলোক হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছেন। আমি বললাম- সাউন্ড পলিউশন, শুনতে পাচ্ছি না স্যার। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়েই তিনি ফোনটি কেটে দিলেন। তিনি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, বিশেষ কোন প্রয়োজন ছাড়া আমাকে ফোন করার কথা নয় তার । পরিবেশ স্বাভাবিক হবার পর আমি তাকে আবারও কল করলাম। সালাম দিয়ে কথা শুরু করতে যাচ্ছিলাম মহুর্তেই অন্য আরেকটি ক্লিনিকের প্রচার মাইক সামনে চলে এল। এবার নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের সুভাগমন বার্তা ৯০ ডেসিবল মাত্রায় কানে এসে বিঁধতে লাগল।
আমি ধমকে উঠলাম- 

- এই ব্যাটা মাইক অফ কর।
সে সাউন্ড অফ করে তর্ক জুড়ে দিল।
- মানুষেক মাইকিং শোনানের জন্যই আমারে হ্যারা টেকা দেয় ভাই।
- ইদানিং তোদের জ্বালায় রাস্তাঘাটে চলাই মুশকিল হয়ে গেছে।
- তয় কি মাইক বন্দ রাকমু নাকি?
- হুম, সেটাই কর।
- আপনে শুনতে না চাইলে কানে আঙ্গুল দিয়া রাহেন ভাই।
ভলিউম ঠেকিয়ে দিয়ে রিক্সা ওয়ালা সামনে এগোতে লাগল।
ব্যাটা কত্তবড় বেয়াদব!

এবার আসল কথায় আসি। অামাদের এই ছোট্ট উপজেলায় এক সময় কাটপিস দেখিয়ে সিনেমা হলের ব্যবসা বেশ জমজমাট ছিল। মাত্র দুই লক্ষ লোকের জন্য ৩ টি সিনেমা হল বাংলার জমিনে আর কোথাও ছিল বলে আমার জানা নেই। বর্তমানে সব গুলো সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেলেও এখানে ৫ টি ক্লিনিক সগৌরবে চলিতেছে। উল্লেখ্য, এখানে একটি সরকারী হাসপাতাল আছে। হাসপাতালটি ভীষণ অসুস্থ্য। এটির চিকিৎসা করার কথা কেই ভাবেন না। তবে এখানে আরো দু'টো ক্লিনিক শুভ মুক্তির অপেক্ষায় আছে। প্রতি শুক্রবার প্রতিটি ক্লিনিকে রংপুর থেকে বিশেষ অজ্ঞ (বড় শহরে রিজেক্টেট) ডাক্তারগন নিয়মিতভাবে তাদের নির্দিষ্ট করা ক্লিনিকে রোগী দেখতে আসেন। কারো কারো ভিজিট আবার ৭০০ টাকা। তিনি যে অনেক বড় ডাক্তার সেটি বোঝাবার জন্যই নাকি এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
কোন ডাক্তার কোন ক্লিনিকে নিয়মিত বসেন সবারই জানা আছে। তবুও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় ক্লিনিকগুলোর প্রতিযোগীতা মূলক প্রচারযজ্ঞ।

আপনারা হয়ত ভাবছেন, এদের উপর এত বেজার কেন আমি। একটা হিসাব দেই।
মোট ৫ টি ক্লিনিকে যদি প্রতি শুক্রবার ৪ জন করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আগমন করেন তাহলে মোট ডাক্তার সংখ্যা ২০ জন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ২০ জন ডাক্তারের জন্য ২০ টি মাইক যদি প্রতিযোগীতায় নামে তথন অবস্থাটা কি হয়! এরা আসলে সবাই মিলে কানের ডাক্তারের রোগীর সংখ্যা বাড়াচ্ছে ।
এটাতো গেলো শুধু ক্লিনিকের প্রচার যন্ত্রণার কথা । বাকী প্রচারের কথা না হয় অপ্রচারীতই থাক। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, মুমূর্ষূ অবস্থায় থাকা সরকারী হাসপাতালগুলোকে অপারেশন করে কেন দ্রুত সারিয়ে তোলা হচ্ছে না? ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারী কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে কেন ঢেলে সাজানো হচ্ছে না? মানুষের অসুস্থতাকে কেন বানিজ্যের উপকরণ বানানো হচ্ছে? ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা ক্লিনিকগুলো স্বাস্থ্য সেবার নামে যেভাবে সাধারণ মানুষের পকেটের স্বাস্থ্য খারাপ করে দেবার প্রতিযোগিতায় নেমেছে, তার প্রচার কেন হচ্ছেনা? যেকোন প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তপক্ষের অনুমতি নিতে হয় - এই প্রচারটি কেন প্রচার করা হয় না ??? স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের চোখে কি উৎকোচের ছানি পরে গেছে? নাকি তারা চোখে কালো চশমা পরে অন্ধ হয়ে অাছেন? তাদের চোখের ট্রিটমেন্ট করাবে কে?

ভাবছি কাল থেকে নাকে প্যাড পরার পাশাপাশি কানে তুলো গুজে রাস্তায় বের হবো।

No comments

Powered by Blogger.